Posted in

ফয়জুল ইসলামের-“ জমিন”

বই পড়া এখন নানা কারণে বেশ কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে পড়েছে! প্রচুর বই পড়ার জন্য জমে আছে, তবে চোখে রিডিং গ্লাস লাগিয়ে পড়তে হবে বলে নয়; বরং সময় করে ওঠা কঠিন হয়ে গেছে। আর বরাবরের মতো বই নিয়ে বসলে ঘুমিয়ে পড়ার শৈশবকালীন অভ্যাসটা এখনো ছাড়েনি। বিচ্ছিন্নভাবে নানা কিছু পড়া হয়ই, তবে কোনো বই শুরু করলে তা শেষ করা যেন আর হয়ে ওঠে না।

গত বইমেলার কিছু বই পড়া শুরু করেছিলাম—সারা বছর জুড়েই পড়ছি, আবার তেমন করে পড়ছি কই! অফিসের ড্রয়ারেও বই রেখেছি, ভেবেছিলাম ব্রেক টাইমে পড়ব, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। এই বছর ফেব্রুয়ারিতে বেশ কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তারপরও নানা রকম খবর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় পড়ে ফেলি, কিন্তু বই ঠিক ততটা পড়া হয় না।

কথাসাহিত্যিক ফয়জুল ইসলাম এ বছর জানুয়ারিতে মারা গেলেন। কী যে কষ্ট পেয়েছি! তবে একজন লেখক আসলেই বেঁচে থাকেন তাঁর লেখায়। এই ফেব্রুয়ারিতে তাঁর “জমিন” গল্প সংকলনটি পড়লাম। পাঁচটি গল্প নিয়ে বইটি। পড়ার সময় কতবার ব্যক্তি ফয়জুল ইসলামকেও মনে এসেছে! এত আপনজনের মতো যোগাযোগ রাখতেন তিনি। অথচ বইটির গল্প পাঠের মাঝে তাঁর উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ!

গল্পগুলো প্রবাস ও দেশের জীবনের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে নির্মিত। “চোখ” নামের একটি গল্প পড়ে চমকে উঠেছি। হয়তো তিনি বেঁচে থাকলে এ নিয়ে তুমুল আড্ডা হতে পারত। কিন্তু ব্যক্তি লেখককে না চিনেও তো আমরা তাঁর লেখায় মুগ্ধ হই। সেই অনুভূতি কি কম কিছু?

“জমিন” বইয়ের নাম গল্পটি আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যের প্রেক্ষাপটে লেখা। গত বছর অক্টোবরের অটাম দেখতে নিউইয়র্কের কাছে আরেকটি স্টেটে ভারমন্টের একটি শহরে গিয়েছিলাম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর ভারমন্টে থাকার গল্প। কথাসাহিত্যিক ফয়জুল ইসলামের “জমিন” বইয়ের অনেক গল্পই আমার এই প্রবাস জীবনে বারবার মনে পড়ে যাবে—এমনভাবে তিনি গল্পগুলো লিখেছেন। “জমিন” বইয়ের নাম গল্পটির শেষ লাইন—

“কালো কাকের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় কটনউডের গোড়ায়, অন্ধকারে, চুপচাপ বসে আছে লিটিল বুল আর গিয়াস উদ্দিন।”

আপনার বইটি পড়ার পর কিছু সময় তেমনি চুপচাপ বসে রইলাম, অনুভব করলাম আপনি আমাদের মাঝে আছে, আপনার লেখার মধ্যদিয়ে। বইমেলায় বইটি নিশ্চয় আছে, পাঠক চাইলে খুঁজে নিতে পারেন।